🌺 গঙ্গার উৎপত্তি কাহিনী – পুরাণ মতে
ভারতীয় সংস্কৃতিতে গঙ্গা শুধুমাত্র একটি নদী নয়, তিনি এক দেবী। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে তাঁকে “গঙ্গা মা” নামে সম্বোধন করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, তাঁর এক ফোঁটা জলও মানুষের সকল পাপ মোচন করতে সক্ষম। এছাড়াও অনেক ধর্মীয় কাজে মা গঙ্গার জল ব্যবহার করা হয়।তাই প্রাচীনকাল থেকেই গঙ্গার মাহাত্ম্য ভারতীয় আধ্যাত্মিক জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে।
গঙ্গার উৎপত্তি
পুরাণ মতে, ভগবান বিষ্ণুর পদধূলি থেকেই গঙ্গার সৃষ্টি। সেই কারণে তাঁকে বলা হয় “ত্রিপথগা”— যিনি তিন জগতে প্রবাহিত হন: স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতাল। দেবলোক থেকে গঙ্গা প্রথমে স্বর্গে অবস্থান করছিলেন, পরে ভাগ্যক্রমে মর্ত্যে অবতীর্ণ হন।
ভগীরথের কঠোর তপস্যা
অযোধ্যার রাজা সগরের ষাট হাজার পুত্র কাপিল মুনির অভিশাপে ভস্মীভূত হয়ে ছিলেন। তাঁদের আত্মা মুক্তি পায়নি। সেই আত্মাদের উদ্ধার করার জন্য সগর বংশীয় ভগীরথ মহারাজ বহু বছর ধরে কঠোর তপস্যা করেন। অবশেষে ব্রহ্মা গঙ্গাকে পৃথিবীতে পাঠানোর অনুমতি দেন। কিন্তু সমস্যা হলো— গঙ্গার প্রবল স্রোত পৃথিবী ধারণ করতে পারবে না।
মহাদেবের করুণা
এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে ভগীরথ ভগবান মহাদেবের কাছে প্রার্থনা করেন। করুণাময় শিব তাঁর জটা জালে গঙ্গাকে ধারণ করেন। এরপর তিনি ধীরে ধীরে জট খুলে গঙ্গাকে প্রবাহিত করেন, যাতে পৃথিবী ভেসে না যায়। এভাবেই গঙ্গা পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে ভগীরথের পূর্বপুরুষদের আত্মাকে মুক্তি দেন। এখান থেকেই "ভগীরথ প্রচেষ্টা" কথাটির উৎপত্তি।
গঙ্গার মাহাত্ম্য
গঙ্গার গুরুত্ব শুধু ধর্মীয় আচারেই সীমাবদ্ধ নয়, তাঁর নাম উচ্চারণ করলেই মানুষ মনে এক বিশেষ শান্তি অনুভব করে। হিন্দু বিশ্বাস মতে—
- গঙ্গাজলে স্নান করলে পাপ মোচন হয়।
- মৃত্যুর পর গঙ্গাজল পান করালে আত্মা মুক্তি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়।
- গঙ্গার তীরে পিণ্ডদান করলে পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
- গঙ্গা সপ্তমী ও গঙ্গা দশহরায় বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
- যেকোনো ধর্মীয় কাজে মা গঙ্গার জল ব্যবহার করা হয়।
আধ্যাত্মিক শিক্ষা
গঙ্গা আমাদের শেখায়— জীবনের সব বাধা অতিক্রম করে ধীরে ধীরে এগোতে হয়। যেমন গঙ্গা পাহাড় থেকে নেমে সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছায়, তেমনি মানুষকেও নিজের জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরন্তর চলতে হয়। তাই গঙ্গা শুধু নদী নন, তিনি আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক।
গঙ্গা মা আজও কোটি ভক্তের কাছে মুক্তি, শান্তি এবং ভক্তির প্রতীক হয়ে বিরাজ করছেন। তাঁর কাহিনী আমাদের মনে করিয়ে দেয়— ভক্তি আর ধৈর্য থাকলে অসম্ভবও সম্ভব হয়ে ওঠে।